জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হয়ে থাকে যেমন স্থান পরিবর্তন, ব্যবসা, চাকুরি সহ আরো বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হতে পারে। এগুলোর পরিবর্তনের সাথে সাথে ভোটারের ঠিকানা ও ভোটার এলাকা পরিবর্তন হয়ে থাকে। আজকে আমরা জানবো কিভাবে আপনার এন আইডি কার্ডের প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করা যায়।

আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশ জাতীয় পরিচয় পত্রে বর্তমান ও স্থায়ী দুটি ঠিকানা থাকে। উল্লেখিত দুটি ঠিকানার মধ্যে যে কোন একটি ঠিকানার ভোটার হতে হবে। যদি বর্তমান স্থায়ী একই ঠিকানা হয় তাহলে সে স্থায়ী ঠিকানার ভোটার হয়ে থাকে।

আমরা যখন কোন কারণবশত এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বসবাস করতে থাকি তখন আমাদের ভোটার এরিয়া পরিবর্তন করা যায়। তখন আমাদের বর্তমান যে ঠিকানায় থাকি সে ঠিকানার ভোটার হওয়া যায় এবং স্থায়ী ঠিকানা আমার জন্মস্থানের যে ঠিকানা বা আপনার জন্মস্থানের যে ঠিকানা সেটাই থাকবে। এখানে স্থায়ী ঠিকানা কখনো পরিবর্তন হবে না। আপনার বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী আপনি ভোটার হতে পারেন।

ভোটার এরিয়া পরিবর্তন করতে হইলে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক কিছু শর্ত মেনে আবেদন করলেই হবে। সে আবেদনের জন্য বা ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য বা সংশোধনের জন্য কি কি প্রয়োজন হতে পারে তা তুলে ধরব।

ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হবেঃ

১। আবেদনকারীর এন আই ডি বা জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
২। যে এলাকায় স্থানান্তর হতে চান অর্থাৎ ভোটার হতে চান সে এলাকার নাগরিকত্ব সনদ।
৩। আপনার বর্তমান এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ অথবা চেয়ারম্যান এর কার্যালয় থেকে ভোটার স্থানান্তর করার প্রত্যয়ন পত্র বা অনুমতিপত্র
৪। যে এলাকায় স্থানান্তর অর্থাৎ ভোটার ট্রান্সফার করতে চান সে এলাকায় আপনার নামে বিদ্যুৎ, পানির বিল, ট্যাক্স রশিদ, জমির খতিয়ান, ইউটিলিটি বিল এর কপি প্রয়োজন হবে।
৫। উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে যদি আরো অন্যান্য কাগজপত্র চাই সেগুলা জমা দিতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তনের দুইটি সিস্টেম রয়েছেঃ

ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তনের দুটি নিয়ম। যথা:
১! অনলাইনের মাধ্যমে
২! অফলাইনের মাধ্যমে

আপনাকে এটা শিওর হতে হবে যে আপনার বর্তমান যে ঠিকানা পরিবর্তন করবেন সেই ঠিকানারি ভোটার হতে হবে । আর যদি বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দুটোই একই হয় তাহলে আপনার চিন্তা করার কোনো কারণ নেই আপনার ওই ঠিকানা অনুসারেই ভোটার হবেন।

এক্ষেত্রে আপনি যদি বর্তমান ঠিকানায় অর্থাৎ পরিবর্তিত ঠিকানায় ভোটার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি সেখানে ভোট দিতে পারবেন । যেমন ধরুন আপনার ঠিকানা ঢাকার কোন একটা জায়গায় এখন আপনি দিনাজপুর কিংবা বরিশাল কিংবা চট্টগ্রামের কোন এক জায়গার ভোটার হতে চান, তাহলে আপনি বর্তমান ঠিকানার ভোটার হয়ে বর্তমান এলাকার সকল কিছু ভোগ করতে পারবেন এবং ভোট দিতেও পারবেন।

অনলাইনে মাধ্যমে ভোটার স্থানান্তর আবেদন (Voter Transfer Online Application System)

অনলাইনের মাধ্যমে আপনি যদি আপনার ভোটার এরিয়া বা বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান শুধুমাত্র হাউস বা বাড়ি নং এবং পোস্ট অফিস পরিবর্তন করতে পারবেন সম্পূর্ণভাবে বিভাগ জেলা উপজেলা পরিবর্তন করতে পারবেন না।

অফলাইনে ভোটার স্থানান্তর ফরম পূরন প্রক্রিয়া (Voter Transfer Offline Application Process)

তাহলে কি করতে হবে? আপনাকে অবশ্যই ভোটার মাইগ্রেশন ফর্ম – ১৩ পূরণ করে স্বশরীরে যে এলাকার ভোটার হতে চান সে এলাকার স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে দিতে হবে।আপনার আবেদনটি স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিস যাচাই করে যৌক্তিক মনে হলে অনুমোদন করবে। আর এটাই আপনার ও আমার জন্য বেস্ট মনে হবে।

আপনি যদি ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেন তাহলে আপনার আইডি কার্ড আগেরটাই বহাল থাকবে কিন্তু আপনি যদি নতুন আইডি কার্ড চান তাহলে অনলাইনের মাধ্যমে ২৩০ টাকা কার্ড ইস্যু ফি জমা দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন থেকে নিতে পারেন।

নিচে ভোটার আইডি কার্ডে স্থানান্তর ফরম ১৩ দেওয়া হল।

ফরম-13 এর পিডিএফ লিংক ক্লিক করুন।

আসুন দেখি অনলাইনে মাধ্যমে কিভাবে ঠিকানা পরিবর্তন করা যায় তবে আগে বলে রাখা ভালো অনলাইন এর মাধ্যমে শুধু নাগরিকের বাড়ির নম্বর ডাকঘরের নাম পোস্টকোড পরিবর্তন করা যাবে। এছাড়া পুরো উপজেলা বিভাগ এবং অন্যান্য সকল তথ্যাদি পরিবর্তনের জন্য আপনাকে অবশ্যই ম্যানুয়ালি ফরম পূরণ করে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। তাহলে চলুন দেখা যাক কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে আংশিক ঠিকানা পরিবর্তন করা যায়।

কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলেই আপনার অনলাইনের মাধ্যমে ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারেন।

১। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ওয়েবসাইট https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ তে প্রবেশ করুন
২। এরপরে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন।
৩। ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন ফরমটি পূরণ কর
৪। এরপর প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করুন
৫। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অর্থাৎ প্রমাণ পত্র আপলোড করুন।
৬। এবার আবেদন ফরমটি জমা বা সাবমিট করুন।

আসুন এই পুরো প্রসেসটি ছবির মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি (Voter Transfer Online Application System Full Process)

প্রথমে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ওয়েবসাইট https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করব।

একাউন্ট রেজিস্ট্রেশনঃ

আপনার কাঙ্ক্ষিত সেবাটি পাওয়ার জন্য বা যে কোন এন আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করার জন্য বা সংশোধনের জন্য আপনাকে অবশ্যই ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন বাটন থেকে ওয়েবসাইট রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করতে হয় তার সম্পূর্ণ একটি ব্লগ দেয়া আছে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন লিংকে ক্লিক করে সেটি দেখে আসুন।

ঠিকানা পরিবর্তনঃ


অ্যাকাউন্ট লগইন করা হলে বা একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা হলে প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করুন।


প্রোফাইল থেকে নিচে ডান পাশে দেখুন এডিট নামে একটি বাটন আছে ক্লিক করুন।

এখানে আপনার তিনটি স্টেপ দেয়া আছে ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য এবং ঠিকানা। ঠিকানা লেখা অপশনটিতে ক্লিক করুন দেখবেন বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা চলে আসছে।


এখানে আপনার বর্তমান যে ঠিকানাটি ব্যবহার করতে চান সে ঠিকানাটি সঠিকভাবে দিয়ে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পরে আপনার পরিবর্তিত ঠিকানা দেখতে পাবেন। ভালোভাবে দেখে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

এবার আপনাকে Bkash এর মাধ্যমে 345 টাকা পেমেন্ট করতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন হবে একটি Smartphone ও Install করুন Bkash Appটি ।

প্রথমে Bkash Apps পিতে লগিন করুন। paybill (পে বিল) লেখা অপশনটিতে যান। সেখানে সার্চবারে লিখুন NID ।এ অপশনটি চলে আসলে ক্লিক করুন।

এখানে আপনার পরিবর্তন এর ধরন সিলেক্ট করে Nid নম্বর টি দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে থাকুন। দেখুন 345 টাকা পে করার জন্য পর্যাপ্ত রেখে পেমেন্ট করে দিন। পেমেন্ট টি সফল হয়ে গেলে আপনি এবার আপনার প্রয়োজনীয় যেসব কাগজপত্র লাগবে সেগুলো আপলোড করে দিন।

সবকিছু ঠিকঠাক পূরন করা হলে আপনি আবেদনটি সাবমিট করে দিতে পারেন।

আমি আশা করি আপনি পুরোটা সঠিক ভাবে পড়ে কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এখন থেকে আপনি নিজেই ঘরে বসে নিজের কাজ করে নিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here