জন্ম নিবন্ধন হলো একটি সরকারি প্রক্রিয়া যেখানে একজন ব্যক্তি জন্মের আনুষ্ঠানিক তথ্য সরকারি নথিতে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। এদিকে একটি আইনি দলিল হিসেবেও গণ্য করা হয়। যেখানে ব্যক্তি তার নিজের নাম পিতা মাতার নাম তার জন্ম তারিখ ও বর্তমান স্থায়ী জন্মস্থানের ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বা মানুষ যে যেভাবে পরিচয় প্রদান করতে পারেঃ
১। ব্যক্তির আইনি পরিচয়
২। সরকারের কাছে নথিভূক্ত
৩। বয়স ও নাগরিকত্বের প্রমাণ
জন্ম নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন ব্যক্তির আইনি পরিচয় প্রতিষ্ঠায় করতে ভূমিকা রাখে। এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে যা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
১। আইনি সত্তা ও পরিচয়: জন্ম নিবন্ধন একটি শিশুর আইনিভাবে পরিচয় পত্র হিসেবে কাজ করে। এটি কোন দেশের সরকারের কাছ থেকে অস্তিতে স্বীকার করার একটি প্রমাণ পত্র এবং ভবিষ্যতে যে কোন সরকারিভাবে সরকারি পরিষেবার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
২। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: আপনি যখন বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাবেন এবং স্বাস্থ্য সেবা নিবেন এক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং দেশের বাহিরে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিনের প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন থাকাটা আবশ্যক।
৩। পাসপোর্ট ও অন্যান্য সরকারি নথি: পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হলে জন্ম নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। এটি ছাড়া ভবিষ্যতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া যাবে না। এর উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন ধরনের নথি অনলাইন উপাক্ত তুলে ধরা হয়।
৪। বিবাহ সম্পত্তি অধিকার ও উত্তরাধিকার: জন্ম নিবন্ধন ছাড়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জমি বা সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা এবং উত্তরাধিকার দাবি করা ইত্যাদি কাজে ঝামেলা পোহাতে হয়।
৫। ভোটাধিকার: দেশের ভোটার নিবন্ধন ও ভোটাধিকার প্রাপ্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন একটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে বিবেচিত হয়।
৬। সরকারি সুবিধা: বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা করন প্রকল্প বা সরকারি সুবিধা পেতে জন্ম নিবন্ধন থাকাটা সবচাইতে জরুরী। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো এটি সরকারের কাছে তার নাগরিকত্ব এবং বয়স প্রমাণের একটি নথি।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই বা ভেরিফিকেশন কি (what is birth verification online Check)?
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই বা ভেরিফিকেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জন্ম সনদের বা জন্ম নিবন্ধন সনদের সঠিকতা ও বৈধতা যাচাই বাছাই করার একটি প্রক্রিয়া। এটি আরো অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে সরকারের কাছে যে তথ্য জমা রাখা হয় সে তথ্যের সাথে আপনার হাতের যে তথ্যগুলো আছে সেটির সাথে সম্পূর্ণ এক কিনা তা যাচাই করা।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই বা ভেরিফিকেশন কেন প্রয়োজন (why need birth verification online copy)
বিভিন্ন কারণে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই প্রয়োজন হয়। নিচে এর প্রয়োজনীয়তা গুলো তুলে ধরা হলো।
১। সনদের বৈধতা নিশ্চিত করা: সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো সেবা নিতে জন্ম সনদের প্রমাণ চাওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে যাচাই বা ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সনদের বৈধতা যাচাই করা সহজ।
২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাসপোর্ট ও ভর্তির কাজে ব্যবহৃত: বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে ও ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে ইত্যাদি পরিষেবা পাওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন যাচাই বা ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হতে পারে।
৩। প্রতারণা রোধ: ভূয়া বা জাল জন্ম সনদ ব্যবহার করে কেউ যাতে প্রতারণামূলক সুবিধা না নিতে পারে, এক্ষেত্রেও জন্ম সনদের ভেরিফিকেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪। সরকারি তথ্য ভান্ডার মিল: জন্ম নিবন্ধন সনদে থাকা তথ্য সংশ্লিষ্ট সরকারি তথ্যের সাথে মিলে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য ভেরিফিকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই বা ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া: জন্ম নিবন্ধন যাচাই বা ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াটি খুব সহজ এটি অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় বসে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে ভেরিফিকেশন করা যাবে।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই করার নিয়ম (birth verification online check system):
জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য https://everify.bdris.gov.bd ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করুন । প্রবেশ করার সাথে সাথে এখানে আপনি জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ও জন্ম তারিখ টি দিয়ে সার্চ বাটনটিতে ক্লিক করলেই আপনার কাঙ্ক্ষিত জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপিটি চলে আসবে।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই করার নিয়ম নিচে ছবি সহ দেখানো হলো (birth verification online check system with photos see blew)
ওয়েবসাইট প্রবেশ:
সরকার কর্তৃক নির্ধারিত https://everify.bdris.gov.bd ওয়েবসাইট টি তে প্রবেশ করুন। ওয়েব সাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনাকে ১৭ ডিজিটের ১৭ ডিজিটের একটি জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, আপনার জন্ম তারিখ দিতে হবে। জন্ম তারিখ লিখার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, প্রথমে বছর, মাস, দিন অনুপাতে দিতে হবে। যেমন ২০০২-০৪-০১ এভাবে আপনি জন্ম তারিখটি দিয়ে দিন। পরবর্তীতে আপনাকে একটি ক্যাপচা পূরণ করতে হবে। ক্যাপস্যটির যোগফল যা হবে “the answers is” লেখা এ বক্সের ভিতরে লিখুন। সর্বশেষ search বাটনটিতে ক্লিক করুন।

সার্চ বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনাকে আপনার কাঙ্কিত ভেরিফিকেশন কপিটি দেখিয়ে দিবে সেটা আপনি চাইলে প্রিন্ট বা ডাউনলোড করে নিতে পারেন। নিচের দেয়া ছবিটি দেখ নিন।

মৃত্যু সনদ বা নিবন্ধন অনলাইন যাচাই:
বর্তমান সময়ে জন্ম নিবন্ধন এর পাশাপাশি মৃত্যু নিবন্ধন বা সনদটিও অনলাইন থেকে নেওয়া যায় বা সরকার কর্তৃক অনলাইনে রেকর্ড করা হয় । এ মৃত্যু সনদটি নেওয়ার জন্য ঐ মৃত ব্যক্তির অবশ্যই জন্ম সনদ থাকতে হবে। তাহলে তার মৃত্যু সনদটি অনলাইন থেকে নেওয়া যাবে। নিচে কীভাবে মৃত্যু সনদ বা নিবন্ধন অনলাইন যাচাই করার নিয়ম ছবি সহ তুলে ধরা হলোঃ
ওয়েবসাইট প্রবেশ:
সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মৃত্যু সনদ বা নিবন্ধন যাচাই https://everify.bdris.gov.bd/UDRNVerification ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করুন। এখানে মৃত্যু সনদ বা ডেট রেজিস্ট্রেশন এর ১৭ ডিজিটের নাম্বার থাকবে সেটি দিয়ে দিন এবং যেদিন মৃত্যু হয়েছে সেদিনের তারিখটি অর্থাৎ মৃত্যু নিবন্ধিত তারিখটি (Date of Death) দিয়ে দিন এবং ক্যাপচাটি পূরণ করে search বাটনে ক্লিক করুন।

সার্চ বাটনটিতে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার মৃত্যুর সনদটি অনলাইন ভেরিফিকেশন কপি চলে আসবে। এটি আপনি চাইলে প্রিন্ট বা স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতে পারেন।
মৃত্যু নিবন্ধন ভেরিফিকেশন কপিটি ঠিক এ রকম।

আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চিতভাবে জন্ম নিবন্ধন অলাইন যাচাই করার সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারছেন।