কোনো জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির যাচাই-বাছাই এর জন্য জমির পর্চা প্রয়োজন হয়। তবে আমরা অনেকেই জমির পর্চা কিভাবে যাচাই করতে হয় বা ডাউনলোড করতে হয় এই সম্পর্কে অবগত না। আজ আমরা জমির পর্চা ডাউনলোড করার যতগুলো স্টেপ আছে সবগুলো জেনে নিব এবং বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

বর্তমান সময়ের প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়কে ডিজিটাল বা অনলাইন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য সেবা অনলাইনের মাধ্যমে পাওয়া যায় বা পেয়ে থাকি। আমরা যেসব সেবাগুলো অনলাইনে পেয়ে থাকি সেসব সেবাগুলো হলঃ

১। জমির নামজারি আবেদন
২। বিভিন্ন পর্চা যাচাই ও ডাউনলোড করা
৩। খতিয়ান বের করা
৪। খাজনা প্রদান ও খাজনা রসিদ ডাউনলোড
৫। মৌজার ম্যাপ ডাউনলোড করা
৬। যার জমি সেই মালিকের নাম যাচাই করা

এছাড়াও আরো অনেক সেবা গুলো অনলাইনে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে জমির দলিল সহ অন্যান্য কাজগুলো অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা ও তা সম্পন্ন করা যাবে। প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে সাধারণ জনগণকে ভূমি সেবা অনলাইন ভিত্তিক করার লক্ষ্যেই সমস্ত ভূমির কাজগুলো অনলাইন করা হয়েছে। যাতে মানুষ দালাল কিংবা প্রতারকের ধারে না গিয়ে নিজেই কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারে।

জমির পর্চা কেন প্রয়োজন

জমির সঠিক মালিক কে? তা জানার জন্য জমির পর্চা দেখার প্রয়োজন পড়ে। জমির মালিক কে তা যাচাই করার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ আপনি যার থেকে জমি ক্রয় করতে চান সে কি আসলেই প্রকৃত মালিক নাকি অন্য কেউ এটি কনফার্ম হওয়ার জন্য রেকর্ড বা পর্চার প্রয়োজন হয়। তাই আপনি অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় বসে জমির পর্চা যাচাই বাছাই বা ডাউনলোড নিজেই করে নিতে পারেন।

জমির পর্চা ডাউনলোড করতে যেসব তথ্য প্রয়োজন হবে

আপনি আগে থেকেই কিছু জিনিস জেনে রাখতে হবে যদি জমির পর্চা ডাউনলোড বা সার্টিফাইড কপি পেতে চান।

১। বিভাগের নাম, জেলা, উপজেলা, জমির মৌজা, খতিয়ান, জমির দাগ নং, মালিকের নাম ইত্যাদি।

উক্ত বিষয়গুলো আপনি যে লোকের কাছ থেকে জমি কিনতে চান তার থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই চেক করে নিতে পারেন বা জমির পর্চা ডাউনলোড করতে পারেন।

জমির পর্চা ডাউনলোড করার নিয়ম

জমির পর্চা ডাউনলোড করার জন্য তাদের ওয়েবসাইট ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ওয়েবসাইট https://eporcha.gov.bd তে প্রবেশ করতে হবে। এখানে নির্দেশিকা, সার্ভে খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ, ও আবেদনের অবস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো থাকবে। এখান থেকে সার্ভে খতিয়ান নামক যে অপশনটি আছে সেখানে ক্লিক করে দিতে হবে। নিচের বক্স থেকে আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং কোন ধরনের খতিয়ান, সেই খতিয়ানটি সিলেক্ট করে এবং মৌজার নাম এবং খতিয়ানের নং টি দিয়ে খুজুন বাটনটিতে ক্লিক করুন। এরপর বিস্তারিতখতিয়ান আবেদন দুইটি অপশন থাকবে আপনি চাইলে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন এবং খতিয়ানের আবেদন অপশনটি ক্লিক করে খতিয়ানের আবেদন করতে পারেন। নতুন একটি ফরম অর্থ্যাৎ খতিয়ান আবেদন ফরম আসবে, এখানে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নং, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর ও নাম ঠিকানা দিয়ে অনলাইন কপি পাওয়ার জন্য ১০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করুন। আবেদন ফি সম্পন্ন করার সাথে সাথে আপনাকে সামনে পর্চা বা খতিয়ান যাচাই কপি চলে আসবে। উক্ত কপিডি ডাউনলোড করে আপনি সবকিছু যাচাই করে নিতে পারেন।

জমির পর্চা ডাউনলোড চিত্রসহ দেখানোর হলো :

প্রথম ধাপঃ ওয়েবসাইট প্রবেশ করুন।

এ পর্যায়ে প্রথমে আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ওয়েবসাইট https://eporcha.gov.bd প্রবেশ করে করুন। অবশ্যই আপনাকে এই ঠিকানায় প্রবেশ করার জন্য মোবাইল অপশন থেকে Chrome browser ওপেন করে প্রবেশ করতে হবে।

সার্বিক খতিয়ান এ প্রবেশ করুন।

দ্বিতীয় ধাপঃ সার্ভে খতিয়ান

উক্ত ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করার পর আপনি সার্ভে খতিয়ান অপশন দিতে ক্লিক করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, খতিয়ানের ধরন, মৌজা, খতিয়ানের তালিকা খতিয়ান নং লিখে দিয়ে খুঁজুন অপশনে ক্লিক করুন।

তৃতীয় ধাপঃ বিস্তারিত ও খতিয়ান আবেদন

এই পর্যায়ে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত খতিয়ানের মালিক পাওয়ার পরে বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করে বিস্তারিত দেখতে পারেন। যদি আপনি আরো বিস্তারিত দেখতে চান তাহলে খতিয়ানের আবেদন করুন বাটনটিতে ক্লিক করুন।

চতুর্থ দাপঃ পর্চা বা খতিয়ানের আবেদন।

এ পর্যায়ে আপনি খতিয়ানের আবেদন করার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, নাম ঠিকানা এবং আবেদনের ধরন, আপনি সার্টিফাইড কপি নিতে চান নাকি অনলাইন কপি নিয়ে সাথে সাথে প্রিন্ট করে নিতে চান সেটি নির্বাচন করুন এবং যদি আপনি সাথে সাথে নিতে চান বিকাশের মাধ্যমে ১০০ টাকা পেমেন্ট করুন পেমেন্ট করে দিন ‌।

পঞ্চম ধাপঃ ফি পরিশোধ।

আপনি ১০০ টাকায় ফ্রি পরিশোধ করার জন্য বিকাশ বা নগদ দিয়ে বা অন্যান্য উপায়ে যেকোন ভাবে ফ্রি পরিশোধ করে দিতে পারবেন অবশ্যই প্রক্রিয়াটি খুব সহজেই ফি পরিশোধ করতে পারেন। আমি দেখানোর কিছু মনে করিনি। ফি পরিশোধ করার সাথে সাথে খতিয়ানের একটি কপি দিয়ে দিবে ডাউনলোড করার জন্য। যা আপনি মোবাইল থেকেও দেখতে পারবেন বা কম্পিউটার থেকে দেখতে পারবেন বা প্রিন্ট করেও নিতে পারেন।

ষষ্ঠ ধাপঃ পর্চা বা খতিয়ান যাচাইকরন।

এ পর্যায়ে আপনার ডাউনলোডকৃত বা প্রিন্ট কৃত খতিয়ানটি আপনার হাতে নিয়ে আপনি যাচাই করতে পারেন যে আসলেই আপনি আর দলিল বা যার কাছ থেকে জমি ক্রয় করতে চান তার তথ্যের সাথে সবকিছু মিল আছে কিনা।

সপ্তম ধাপঃ সার্টিফাইড কপি কিভাবে পাবেন।

সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য অনলাইন কপির জায়গায় সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদনটি করে দিবেন। এটি করার সাথে সাথে আপনাকে সাত দিন সময় নিয়ে ডিসি অফিসের সাথে যোগাযোগ করার বা বলা হবে। এবং সেখান থেকে আপনি সার্টিফিকেট কপিটি নিতে পারবেন।

জমির পর্চা ডাউনলোডের নির্দেশিকা

আপনি সহজে জমির পর্চা বা খতিয়ান ডাউনলোড করার জন্য বা খুঁজে বের করার জন্য ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে একটি গাইডলাইন দিয়ে দিয়েছে সেই গাইড লাইন দেখতে পারেন। এখানে ক্লিক করুন : https://eporcha.gov.bd/guideline

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here